Bank Loan/ব্যাংক লোনের আবেদন

ব্যাংক লোনের আবেদন
[লেখকঃ Sajjat Hossain, এপ্রিল ১৪, ২০১৭ ইং]



ব্যাংক লোনের আবেদন। ব্যাংক লোন প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি নিয়ে আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেক আক্ষেপ আছে। সেই আক্ষেপ বা ক্ষোভের বেশিরভাগই অনেকটা জুজুর ভয় টাইপ ব্যাপার। শতকরা ৯৯% মানুষ ব্যাংক লোন এর আবেদনের জন্য সরাসরি ব্যাংক বা ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের সাথে কোনরকম চেষ্টা না করেই শোনা কথার ভিত্তিতে দোষারোপ করে থাকেন। কয়েকদিন আগে এই বিষয়টা নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম। সেখানে বলেছিলাম যে, পরের পোস্টে – “কিভাবে ব্যাংক লোনের আবেদন এর নিজেকে যোগ্য / ব্যাংকেবল করে তুলবেন, রিস্ক ফ্যাক্টর কমাবেন এবং গুডইউল বা কমিউনিকেশন বাড়াবেন ?” এই বিষয়ে লিখতে চেষ্টা করবো।
সেই লেখার একটি অংশ আজকে শেয়ার করলাম। ব্যাংক লোনের আবেদন এর জন্য “বাংলাদেশ ব্যাংক” একটা “চেকলিস্ট” দিয়েছে। ব্যাংক লোনের আবেদন করার যোগ্যতা এই লিস্টটি। অর্থাৎ – এই লিস্টের শর্তগুলো মোটামুটি পূরণ করতে পারলেই আপনি ব্যাংক লোনের আবেদন করতে পারবেন তারপরে যাচাই বাছাই শেষে ব্যাংক আপনাকে ঋণ দিতে সম্মত হবে।
আমাদের অধিকাংশ উদ্যোক্তাই এই চেকলিস্টের ৫০% শর্তও ঠিকমত পূরণ করতে পারেন না। ফলে ঋণ আবেদন করার যোগ্যতা থাকে না কিন্তু ঋণের তো দরকার। তখন কিছু অনৈতিক চর্চায় লিপ্ত হন। ব্যাংকের লোকদের সাথে লিয়াঁজো করে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করেন কিংবা দালালের খপ্পরে পরেন। অথচ এই লিস্ট ধরে নিজেকে যোগ্য করে তুললেই ঋণ প্রাপ্তির কাজটা শতকরা ৯০ % শেষ হয়ে যায়। অনেকেই বলতে পারেন যে, এই চেকলিস্টই কি সব ? না সব না। তবে এটাই বেশিরভাগ। বাকি থাকে দুটো বিষয় – ব্যাংকের সাথে লেনদেন এবং যোগাযোগ। এই বিষয়টি নিয়ে পরের পোষ্টে আলোচনা করবো।
ঋণ নিতে আগ্রহী SME উদ্যোক্তারা আপাতত এই “চেকলিস্ট” ধরে নিজেকে মিলিয়ে নিতে / প্রস্তুত করতে শুরু করতে পারেন। নিজের উপর, নিজের উদ্যোগের উপর বিশ্বাস থাকলে কোন কিছুই আপনাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। অবিরাম সৎ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন। এসএমই উদ্যোক্তাদের অনেকেরই ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন ও প্রয়োজনীয় পূর্ব প্রস্তুতি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। এসএমই উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণ আবেদনকারীদের কাছ থেকে যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে থাকে তার একটি চেকলিষ্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন যে, ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালার আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্মৃকর্তাগণ কর্তৃক নেয়া হয়ে থাকে। এ চেকলিষ্ট ব্যাংক ঋণ গ্রহণে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের এ ক্ষেত্রে পূর্ব প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। এ চেকলিষ্ট বিষয়ে যে কোন পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য উদ্যোক্তাগণ এসএমই ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

     ব্যাংক লোনের আবেদন এর প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ

১) নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স।
২) প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে চলতি হিসাব
৩) জাতীয় পরিচয়পত্র।
৪) বিগত ১ থেকে ৩ বৎসরের ব্যাংক প্রতিবেদন। ( বিভিন্ন ব্যাংকের চাহিদা ভিন্নতা থাকতে পারে)
৫) ড্রাগ লাইসেন্স (ঔষধ ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য)।
৬) BSTI সার্টিফিকেট (খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে )।
৭) ডিসির অনুমোদন (ডিজেল ও এসিড ব্যবসার ক্ষেত্রে)।
৮) পেট্রোবাংলার সার্টিফিকেট (ডিজেল ও অকটেন ব্যবসার ক্ষেত্রে)।
৯) দোকান/অফিস ভাড়া চুক্তিনামা বা পজিশনের দলিল।
১০) TIN সার্টিফিকেট।
১১) VAT সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
১২) বিদ্যুৎ বিল।
১৩) টেলিফোন বিল।
১৪) সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
১৫) কর্মচারীদের নাম, পদবী, এবং মাসিক বেতনের তালিকা।
১৬) IRC ও IRE সার্টিফিকেট (আমদানী ও রপ্তানী ব্যবসার ক্ষেত্রে)।
১৭) মজুদ মাল ও তার বর্তমান মূল্যের তালিকা।
১৮) স্থায়ী সম্পদের তালিকা ও মূল্য।
১৯) দেনাদারের ও পাওনাদেরর তালিকা।
২০) বর্তমানে অন্য কোথাও ঋন থাকলে তার বিবরণী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের CIB রিপোর্ট, এখানে উলেখ্য যে, এই রিপোর্টের ফরম সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানই
উদ্যোক্তাকে সরবরাহ করে এবং উদ্যোক্তা উক্ত ফরম যথাযথভাবে পূরন করে দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিপোর্ট সংগ্রহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন  করে।
ঋণের আবেদনকারী এবং গ্যারান্টার উভয়ের পাসপোর্ট সাইজ ছবি। এখানে উল্লেখ্য যে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক গ্যারান্টার নিতে পারেন। অনেক প্রতিষ্ঠানই মূল গ্যারান্টোরের অতিরিক্ত
গ্যারান্টার হিসেবে পরিবাররের সদস্যকে গ্যারান্টার হিসেবে নিয়ে থাকে।
গ্যারান্টার ব্যবসায়ী হলে তার ট্রেড লাইসেন্স ও CIB রির্পোট ।
ব্যবসার বিগত ১ বৎসরের বিক্রয়  ও লাভের হিসাবের বিবরনী।
প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অফ ইনকরপোরেশন এবং মেমোরেন্ডাম অফ আর্টিক্যালস, সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্তের রেজুলেশন।
লিমিটেড কোম্পানীর ক্ষেত্রে অডিটকৃত আর্থিক বিবরণী, ট্রেড একাউন্ট, লাভ-ক্ষতির হিসাব, ব্যালেন্স শীট এবং Cash Flow এর স্টেটমেন্ট, কোম্পানীর বর্তমান গ্রাহকদের তালিকা।
পার্টনারশীপ ব্যবসার ক্ষেত্রে Joint Stock Company থেকে রেজিষ্টার্ড এবং নোটারী পাবলিক দ্বারা
নোটারাইজড পার্টনারশীপ ডীড, ঋণ গ্রহন/ হিসাব খোলার জন্য পার্টনারদের রেজুলেশন।
"কোনোরূপ ভূল-ভ্রান্তি করে থাকলে বা আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করা জানাবেন। যদি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং মনে হয় এর মাধ্যমে আপনার পরিচিত কেউ উপকৃত হবে তবে তা অবশ্যই ফেসবুক , টুইটারসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যম গুলোতে শেয়ার করতে ভূলবেন নাহ।"
 [বিঃদ্রঃ আর্টিকেলটি সংগৃহীত]

Comments